মাত্র একপাতা ইঁদুর মারা বিষ। শুইয়ে দিল একটা গোটা মানুষকে। চিরকালের মত নিশ্চিন্তে একটা ঘুম। লক্ষ্মী বলল, বাবাকে জানি। বড় অভিমানী ছিল লোকটা।
তার দাদা বলল, কিছুই তো হয় নি শুধু-
পাড়া পড়শিরা বলল, বুড়ো মানুষ কখন কোন কথার যে কি মানে করে কে জানে।
লক্ষ্মী কাঁদতে কাঁদতে ভাবছিল। অনেক অনেক কথার মাত্র কটা কথা। কটা ঘটনা। তাদের জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকা কিছু ঘটনা। বাবার পাশে শুয়ে শুয়ে তার মুখ থেকে গল্প না শুনলে ঘুম হত না তার। আর দাদারও। বড় দুষ্টু ছেলে ছিল। বাবা ছাড়া তো কিছুই জানত না। সারাদিন শেষ করে সন্ধ্যায় সাইকেলে করে বেড়াতে নিয়ে যেতে হত অফিস ফেরতা বাবাকে। সব আবদার বাবাকে।
পুরীতে সেবার তো বাবার কিছু খাওয়াই হল না নন্দন কাননে বেড়াবার পথে। বিদকুটে শখ ছেলের। ভাত নয় খাবে মিষ্টি। এক ঘণ্টা পরে ফিরে আসতে দেখল টুরিস্ট বাসের হর্ণ বেজে উঠেছে। আর খাবার সময় নেই। বাবার খিদে ছিল পেটে কিন্তু দুঃখ ছিল না মনে। ছেলের আবদার মিটেছে এই ঢের।
দাদাকে এত ভালবাসত যে লক্ষ্মীর খুব হিংসে হত।
বাহাত্তর বছরের অনিমেষ এখন আর বাইরে বেরোতে পারে না। কাজের লোকের করা সাতসকালের খাবার সে খেয়ে নেয় বেলা বারটার মধ্যে। এখন খুব খিদে পায় তার। ছেলেকে বলে দিয়েছে রোজ অফিস থেকে কিছু আনিস বাবা। বড্ড খিদে পায়।
সারাদিন অফিসে কাজের চাপ। সঞ্জিতের ভাল লাগে না। এই তো সেদিন এত ফল টল এনে দিল বাবাকে। সে নিজে এসব কিছু খায় না। সন্ধ্যেবেলা রেস্টুরেন্টে বসে কিছু না খেলে তার হয় না। মাঝে মাঝে মনে হয় রাক্ষসের মত এত খিদে খিদে বাতিক কেন বাবাটার?
রোজ মনে মনে বলে কথাটা সঞ্জিত। আজ মুখ দিয়েই বলে দিয়েছে। সত্যি কথাটা বলা কি এমন দোষের?