"হ্যাঁ রে! এভাবে গড়ানে রাস্তায় গাড়িগুলো যাচ্ছে... খাদে পড়ে যাবে না তো?" - পরলোকগত বন্ধুর কথাগুলো মনে করে, প্রথমে হো হো করে হাসতে থাকেন নরোত্তমবাবু, তারপর হঠাৎ এক্কেবারে চুপ করে গিয়ে শুকনো গলায় বলেন, "মনে আছে সুভাষ? তুমি তখন অনেক ছোটো। সিকিমের পাকদন্ডি-তে বাসে বসে আতঙ্কে প্রভাস কেমন ভুল বকছিল!"
"মনে নেই আবার? তারপর সবাই রে-রে করে বকাবকি শুরু করায় ওইসব বলা বন্ধ করল! আসলে বাবা বরাবরই ভীতু প্রকৃতির ছিল। একা বাইরেও কখনও যায় নি সেভাবে, আপনাদের সঙ্গে ছাড়া।"
"হ্যাঁ ঠিকই। ভীতু কিন্তু প্রকৃত বন্ধুবৎসল, কর্তব্যপরায়ণ ও সৎ একজন মানুষ ছিলেন তোমার বাবা।" - গম্ভীর গলায় প্রিয় বন্ধুর স্মৃতিচারণ করে স্তব্ধ হয়ে যান নরোত্তম বাবু।
কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে অবশেষে নীরবতা ভঙ্গ করে সুভাষ। শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ-পত্রখানি কাকাবাবুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাত জড়ো করে বলে, "আসবেন কিন্তু কাকাবাবু। আমি জানতাম আপনাকে সকালে লেকেই পাবো, তাই সোজা এখানেই এলাম। এবার উঠি, আরো কয়েকটা জায়গায় যেতে হবে। আসি ।"
"এসো তাহলে!" - সুভাষের অপসৃয়মান অবয়বের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নরোত্তম বাবু লেকের জলের দিকে তাকান। জলে সবুজের মায়াময় ছায়া বাতাসে ভেঙেচুরে যাচ্ছে। তাঁর দু-চোখেও জল। প্রতিদিন মর্নিং ওয়াকে আসার সূত্রেই এই লেকের ধারে একদিন আলাপ হয়েছিল হরপ্রসাদ, মণিময়, অখিল, রঞ্জন, প্রভাস - এদের সকলের সাথে। আজ কেউ নেই, তিনি একা। সবাই একে একে চলে গেছে পৃথিবী ছেড়ে। ওরা নেই, তিনি মানতে পারেন না কিছুতেই। নরোত্তম বাবু চোখের জলে শপথ নেন, যতদিন বাঁচবেন তিনি রোজ মর্নিং ওয়াকে আসবেন। বলা যায় না... কোনোদিন পুরনো বন্ধুদের কারো সাথে দেখা হয়ে যেতেও পারে।