গোঁসাইডাঙার মাণিক পীর ~ নাসির ওয়াদেন

 



দলে দলে লোকজন আলপথ ভেঙে মাঠের মধ্য দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। একজন দুজন হলে হয়তো সেরকম কৌতূহল হতো না মজিদের। তাই বলে এত লোক, তাও পথ বেপথ ভেঙে ছেলে-বুড়ো, নারী-কন্যা হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাচ্ছে এবড়ো খেবড়ো মাঠের ওপর দিয়ে। কিছুদিন আগেই ধান কাটা মেশিন দিয়েই গেরস্ত চাষিরা গাছ কেটে ধানগুলো ট্রাক্টারে বোঝাই করে বইয়ে নিয়ে গেছে বাড়িতে ।  খড়গুলো পড়ে রয়েছে জমিতে সারি সারি। এই খড়  অনেকেই বোঝা বেঁধে মাথায় করে তুলে নিয়ে যাচ্ছে বাড়ির দিকে । গরু না থাকলেও একেবারে যে নেই তা বলা যাবে না। ট্রাক্টরের দৌরাত্মে হাল-বলদে চাষ কবেই উঠে গেছে । তবে বেশিরভাগ বাড়িতে গাই-বাছুর পালন করে দুধ-ঘি খাওয়ার একটা রীতি চালু আছে। গাঁয়ে ঘরে অল্প গৃহস্থ চাষীরা নিজেদের বাড়ির প্রয়োজনে গাঁয়ে গঞ্জে গাই পুষে থাকলেও তারা ওই দুধ বিক্রি করে মাসে মাসে কিছু সঞ্চয় করে। গরীবের সংসারের কাজে লাগায়। গাঁয়ের অধিকাংশ পাড়ায় গরিব মেয়েরা কেঁদপাতা কেটে বিড়ি তৈরি করে, বিক্রি করে বিড়ি কোম্পানিগুলোকে। বিড়ি কোম্পানি তাঁদের এজেন্ট গাঁয়ে গাঁয়ে পাঠিয়ে দেয়। বিড়ি কোম্পানিগুলোর এজেন্ট গাঁয়ে গাঁয়ে গিয়ে পাতা, তামাক দিয়ে আসে। সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে গিয়ে বিড়ি সংগ্রহ করে। কোম্পানির এজেন্টের কাছে মেয়েরা দল বেঁধে বিড়ি নিয়ে যায়। ছাঁট বিড়িগুলোতে বেশি লাভ করে কোম্পানি। তা করুক, গাঁয়ের মেয়েদের হাতে সপ্তাহান্তে  কিছু কিছু টাকা আসে । ওরা তাতেই খুব খুশি। কেউ কেউ নাকছাবি, হাতের বালা, কানের দুল, নানারকম সোনা কিংবা চাঁদির গয়না বানিয়ে নিয়েছে। এতে মেয়েরা গর্ববোধ করে, কেননা স্বামীর কাছে হাত পেতে কিছু চাইতে হয় না।

মজিদের বাড়ির লোকেরাও বিড়ি বেঁধে সংসার চালায় ।  মজিদ ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যায়। প্রথমদিকে রাজমিস্ত্রির যোগান হিসেবে কাজ করত, এখন হাফ মিস্ত্রি হয়েছে। হেড মিস্ত্রি বলেছে, আরও কয়েক মাস হাতে নাতে কাজ করতে হবে। মাপজোখ ঠিক ঠিক ভাবে বুঝে নিতে না পারলে রাজমিস্ত্রি হওয়া যায় না। ওতেও অংক জানতে হয় । মজিদ তো কোনদিনই স্কুলে যায়নি। সেই ছোটবেলায় মা মারা যাওয়ার পর থেকেই বাপ তাকে মোড়লের বাড়িতে বাগাল রেখে দিয়েছিল। মোড়লের বাড়িতে সারাদিন ফাই ফরমাস খাটতে খাটতে দিনগুলো গুজরান হয়ে যেত। পড়বে কখন,,,,,

মোড়লের বড় ছেলেটা কলেজে পড়ে। তার কাছে থেকে মজিদ কিছু কিছু যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ করতে শিখেছিল। তারপর বাবা যেইদিন দ্বিতীয় বউ বাড়িতে আনল, সেদিন থেকেই ঘরে ঘোর অশান্তি। মোড়লের বাড়ি থেকে বাপের বাড়িতে শুতে গেলেই সংসারে অশান্তি হতো। রাতে ঘুম হতো না। তবুও সবকিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু, একদিন একটা অপবাদ সৎ মায়ের কাছ থেকে পেয়ে, যন্ত্রণা মুখ বুজে সহ্য করতে না-পেরে ভিন রাজ্যে চলে গেছিল সে কাজের সন্ধানে। বাবা যে খুব খুশি হয়েছিল তা নয়, কিন্তু সৎ মায়ের মনে শান্তি এসেছিল। বাপও এব্যাপারে ঘরের কথা বাইরে বলে বেশি ঘাঁটাতে চায়নি।

সেদিনে মজিদ পাড়ার বন্ধু রকিকে সাথে করে ওই দলের পিছনে গেছিল গোঁসাইডাঙার মাঠে। সেখানে এই মাঘ মাসে মেলা বসে। মেলা অবশ্যই ২৪ ঘন্টার । সকালে সাজো সাজো রব, সন্ধ্যেয় বেশ মেলা জমে যায়। রাত দশটার পর সকলেই ফিরে যায় নিজের নিজের বাড়ির দিকে। মেলায় যে সকল বিক্রেতা পসরা সাজিয়ে জিনিসপত্র বিক্রি করে, এই কয়েক ঘন্টায় যা বিক্রি বাটা হয়, তা নিয়েই তারা বেজায় খুশি । রাতের মধ্যে সব মালপত্র গুটিয়ে নিয়ে নিজের নিজের বাড়ি ফিরে যায়। পরদিন সকালে গেলে দেখা যাবে মাঠ খাঁ খাঁ করছে। কোথাও কোথাও ন্যাড়া পুড়ছে। গেরস্থরা জমিতে খড় পুড়িয়ে সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করবে।

ছোটবেলায় মজিদ কতদিন ওই গোঁসাইডাঙার মাঠে গরু,ছাগল চড়াতে গেছে; কিন্তু তখন কোনদিনই মেলা বসতে দেখেনি। যখন ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয় কাজের সন্ধানে, তখনও শোনেনি এই মেলার কথা। তখন গোঁসাইডাঙার মাঠ খাঁ খাঁ করত, কাশবনে শিয়াল ডাকত, ডাঙাটার পাশে ছোট জলের খাল। তাতে নানারকম মাছ খেলে বেড়াত, বক পাখি মাছ ধরে খাওয়ার উদ্দেশ্যে উড়াউড়ি করত । খালের পাশে ঝোপেঝাড়ে কাঠবিড়ালি, খরগোশ, বুনো বিড়াল, খব্বিশ, শেয়াল ঘোরাঘুরি করত । মজিদরা গরু বাছুর চড়াতে গিয়ে ওদের লোলুপ দৃষ্টি দেখে চোখে চোখে রাখত পশুগুলোকে। সেই খালপাড়ের উত্তর দিকে একটা পতিত জমিতে বিশাল একটা বটগাছ ছিল। সেই ঝোপেঝাড়ে ঘিরে থাকা বটগাছটার তলায় কতদিন যে বিশ্রাম নিয়েছে তা বলা যায় না। বৃষ্টি হলে গরু ছাগলগুলো সেই বটগাছের তলায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টির হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করত।

 রকি যেতে যেতে মজিদকে বলছিল, জানিস মজু, ওই যে বটগাছটা দেখছিস, ওই গাছটার পাশে একটা মাজার তৈরি হয়েছে। ছোটখাটো একখানা ঘর, এক দরবেশের মাজার, মানিকপীর। কোত্থেকে একজন ফকিরবাবা এসে দশখান গাঁয়ে ঘুরে ঘুরে টাকাপয়সা, চাল-ডাল সংগ্রহ করে ওই ঘরখানা বানিয়েছে। ফকিরবাবা নাকি স্বপ্নে জেনেছে ওইখানে একজন পীর বাবা, সমাধিস্থ আছেন। বহুকাল থেকেই অযত্নে পড়ে থাকার অভিশাপেই নাকি এই মাঠে ভালো চাষ আবাদ হয় না। বর্ষাকালে বেশিরভাগ সময়েই বজ্রপাত ঘটত ওই মাঠে। কুসুমপুরের রিয়াজ মুন্সীকে তো বর্ষায় সময়ে চাষ করতে গিয়ে সাপে কেটেছিল। কোন গুণিন বাঁচাতে পারেনি। সেই থেকে তো লোকজন ওই মাঠে যেতে ভয় করত।

-- তারপর! এখন কি মানুষ ভয় পায় ।

-- ওই তো; মুশকিল আসান ওই ফকিরবাবা।

ওই একদিন এসে দোয়া-মন্ত্র পড়ে। দশখান গাঁয়ের মোড়ল মাতব্বরকে ডেকে, তার স্বপ্নের কথা বললে, একদিন ওখানে বড় করে মিলাদ, ফাতেহা করা হয়। পীরের নামে মাজার বানানো হয়। শিন্নি চড়িয়ে গরিব মিসকিনদের খাওয়ানো হয় ।

-- বেশ, তারপর ?

--- হ্যাঁ, তারপর থেকেই তো ওই মাঠে সোনা ফলছে। বছরে দু'বার ধান হচ্ছে। মাঠের ওপর দিয়ে ইলেকট্রিকের লাইন গেছে, সেই লাইন দিয়ে শ্যালো,সাবমার্সিবল চালাচ্ছে । সারাটা বছর ধরে সবুজে, ফসলে ভরা।

--- কি বলিস, এত পরিবর্তন ?

--- পরিবর্তন বলতে তো পরিবর্তন।

  সেই থেকেই মানুষজন তো এই দিনের অপেক্ষায় থাকে । শুনেছি, এই পীরবাবার মাজারে যদি মনপ্রাণ দিয়ে প্রার্থনা করা হয়, তাহলে মনের ইচ্ছাও নাকি পূরণ হয়ে থাকে।

--- সত্যি?

-- আরে, সেই জন্যই তো মানুষ ওই দিনে দলে দলে গিয়ে মনের কথা পীরবাবার মাজারে জানায়, শিন্নি দেয়, চাদর চড়ায়, যদি পীরবাবা তার মনের ইচ্ছাটা পূরণ করেন।

মাঠের মাঝখানে হরেকরকমের পসরা নিয়ে বসে আছে কিসমত চাচা। কিসমত চাচা উজিরপুরের একজন রসিক মানুষ। মজিদেরা মাঝে মাঝে কিসমত চাচার কাছে দেশ-বিদেশের কথা শুনত, জানত, খবর নিত। লোকটা সেই অল্প বয়স থেকেই চুরি, ফিতে ঝাঁকায় করে, গাঁয়ে গাঁয়ে ফেরি করে বেড়াত। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বিভিন্ন জনের মুখে বিভিন্ন খবর নিত । তাদের মুখের কথা শুনে, নিজের মনের মত সাজিয়ে একটা গল্প তৈরি করে শোনাত লোকজনদের । যখন দেশ স্বাধীন হয়নি, পৃথিবী জুড়ে যুদ্ধ চলছে। সেসময় রেডিওর খবর শুনতে নিষেধ ছিল। রেডিও চালালে পুলিশ ধরে নিয়ে যেত। কিসমত চাচার একখানা ভাঙা  মারফি রেডিও ছিল। বুকের ভেতর ভরে,চাদর জড়িয়ে গোঁসাইডাঙার মাঠের ঝোপের আড়ালে গিয়ে যুদ্ধের খবর শুনত। এই ব্রিটিশরা আক্রমণ করল। কখনো জাপানি বোমারু উড়ে যেত মাথার উপর দিয়ে সাঁই সাঁই করে। চারিদিকে আতঙ্ক, এই বুঝি বোমা পড়ল।

যেদিনে রেডিওতে শুনলো যে, জাপানের মাটিতে বোমা ফেলে জাপান দেশটাকে শেষ করে দিয়েছে, সেদিন থেকেই নাকি যুদ্ধ বন্ধ হয়ে গেছিল। আরও কত কথা, সেইসব গল্পকথা চাচা এমন সুন্দর করে রসিয়ে রসিয়ে বলতো যে, না শুনে উপায় নেই । পেটে খিদে থাকলেও ভোখ নেই। কতদিন গল্প শুনতে গিয়ে মজিদকে মোড়লের গালি মন্দ শুনতে হয়েছিল, একথা আজও ভুলতে পারে না মজু।

চলতে চলতে মজিদ ভাবে তাকে আর কতদিন ভিন রাজ্যে কাজ করে বেড়াতে হবে । আজকাল ভিন রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে ভয়েডরে থাকতে হয়। কত রকম ঝক্কি ঝামেলা। প্রাণকে হাতে নিয়ে দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য পয়সা রোজগার করতে, সেই জন্য থাকতে হয়।

মনে মনে ঠিক করে, আজ মাণিকপীরের মাজারে চাদর চড়াবে। তার কত দিনের মনের বাসনা, সেই কথা অকপটে মন ভরে পীরকে জানাবে। একরকম একটা হিল্লে চাইবে।

--- জোরে জোরে পা চালা, পা চালা মজু। হাঁক দেয় রকি ।

--- হ্যাঁ, এইতো চলছি, আর কত জোরে দৌড়াব বল ।

কিসমত চাচার দোকানের সামনে দাঁড়াতেই কিসমত চাচা চিনতে পারে মজিদকে। কাছে ডেকে নিয়ে বলে, আরে তুই মজু না! গোপালপুরের খবর টবর কেমন রে?

মজু জবাব দেয়, সব বলতে পারবনা চাচা! এইতো

দুদিন হলো বাড়ি এসেছি আর কয়েকদিন থেকেই তো আবার চলে যাব।

   --আচ্ছা! আচ্ছা! তোর বাপ কেমন আছে রে ?

   --- কেমন আর থাকবে? বয়স হলে যা হয়, কোনোরকমে টিকে আছে !

  --- তোর মা! মানে, ওই সৎ মা ! তারা কেমন আছে, তোকে কেমন দেখে ?

  --- ওই একরকম! মাঝে মাঝে টাকা পয়সা দিই ত। তাই একটু আদর খাতির করে। নইলে যা  দজ্জাল মেয়ে! তুমি ত জানো , তোমার গাঁয়ের বিটি কেমন হবে!

সন্ধ্যায় আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে‌। ধবল জোস্নায় ভরে গেছে চারিদিক । ওইদিকে মাঠে লোকজন গিজগিজ করছে। রকি তাড়া দেয়।

-- চল চাদর চাপিয়ে দিয়ে আসি।

মজিদ বলে, দাঁড়া না! দেখছিস না কেমন ভিড়। একটু ভিড়টা কমুক। তারপর না হয় যাব ।

দুজনে মেলার চারিপাশে ঘুরে ঘুরে বেড়ায়। জিলিপি কিনে খায়। গরম গরম মাসকালাইয়ের জিলিপি খুব পছন্দ করে মজিদ। দুজনে পেট পুরে  জিলিপি খায়।

মজিদ বলে, চল। এবার দুটো পাঁপড় ভাজা খাই। মিষ্টির পরে নোনতা খেতে ভালোই লাগে। কি বলিস ?

ওই দিকের পাঁপড়গুলো বেশ বড় বড় সাইজের, তেলে মুচমুচে ভাজা। ও-গুলো খেতে ভালই লাগবে।

রাতের অন্ধকার ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে। লোকজন অনেকেই বাড়িও ফিরে গেছে। ভিড় অনেকটাই হালকা হয়েছে তখন। রাত বাড়ার সাথে সাথে ভিড় যে কমে যায়, তা সকলেই জানে। ছেলেমেয়েরা বায়না মত খেলনা, বাঁশি ,বেলুন কিনে ঘরে নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। আকাশে একটা মেঘ উঠেছে।

উঠে দাঁড়ালো তারা দুজন। রকি বলে, মজু চল! আর দেরি করিস না। আকাশে মেঘ উঠেছে, অকাল বৃষ্টি হতে পারে।

দুজনে এসে চাদর চড়াল পীরবাবার মাজারে। খাদেম সাহেব বলে, শিন্নিটা দাও বাবা! পীরবাবার মাজারে শিন্নি চড়াব। আর তোমরা, মনে মনে পীর মাণিকবাবার কাছে মনের বাসনা জানাও। পীরবাবা তোমাদের মনের ইচ্ছা পূরণ করবেন।

মজিদ কোনদিনই ধর্ম-কর্ম নিয়ে ভাবেনি। পীরবাবাদের বিশ্বাস করেনি; কিন্তু আজকে কেমন যেন তার মনটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।

সেও কি তবে চায় পার্থিব জীবনে সুখ, একটু সুখের সন্ধান।

রকি মজিদকে তার বামকনুইয়ে গুঁতো দিয়ে বলে, চল, চল মজু! তোর মনের দুঃখ,কষ্টের কথা পীর বাবাকে জানা। নিশ্চয়ই পীরবাবা তোর অভাব দূর করে দিবেন।

মজিদ মনে মনে ভাবে, সংসারে অর্থই সবকিছু সত্যি ; কিন্তু টাকা পয়সা, ধনদৌলত থাকলেই কি মানুষ সুখী হতে পারে। তাহলে, সে কি চাইবে?

মনে মনে ঠিক করতে পারে না মজু। সুখ ক্ষণিকের। একটু বেঁচে থাকার জন্যই কি সুখ চাইবে।

না, না। সে টাকাপয়সা, ধনদৌলত ,সুখ চাইতে পারবে না। সে চায়, তার প্রতি যে অবিচার অন্যায় হয়েছে, তার উপযুক্ত বিচার।

আর কি চাইবেসেই পারুলের কথা, যে তাকে একদিন ভালোবাসত এবং সেও তাকে ভালোবাসত। তাকে আর পাবে কি করে। সে তো আজকে অন্য ঘরে বন্দি । তার সংসারে কি নতুন করে আগুন জ্বালাতে চাইবে। না, সে তা পারবে না,,,,

মেঘ থেকে ঝিরঝির করে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি ঝরে পড়তে লাগল। সেই বৃষ্টির জলে ভিজে মন অনেকটা হালকা হতে লাগলো মজিদের।





নাসির ওয়াদেন: বীরভূমের প্রান্তিক শহর মুরারই থানার রঘুনাথপুর গ্রামে কবি নাসির ওয়াদেন এর জন্ম। ২৩ শে জুলাই ১৯৫৯, গ্রামের স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা । ১৯৮৬ সালে রামপুরহাট কলেজ থেকে স্নাতক হন । তারপর ১৯৯৫ সালে শিক্ষকতার সাথে যুক্ত হন এবং সম্প্রতি অবসর গ্রহণ করেছেন । সামাজিক প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে নানান ঘাত-প্রতিঘাত খেয়ে তিনি বড়ো হয়েছেন ।তাঁর প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ হল ১৷ অন্ধকার কুরুক্ষেত্র খোঁজে,  ২৷ বিবর্ণ বৃষ্টি ভেজা দাগ, ৩৷ বুক ছুঁয়েছি নগ্ন রাতে,  ৪ ৷ প্রিয় ফুল ও অভিমানী ইচ্ছেরা, ৫৷ কোকিল ডাকলেই বসন্ত আসে ৬। সভ্যতার নামে চাকা ৭। ভোরের কুয়াশা : ডানা গীতিকা। প্রকাশের পথে, শরতের দৈবদৃষ্টি : একটি মেলডি, অদৃশ্য অস্তিত্বের দরোজা। একমাত্র গল্পগ্রন্থ , অথবা অন্য পৃথিবী, ২০১৩ সালে সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য "কাঞ্চিদেশ সাহিত্য " পুরস্কার লাভ করেন । প্রকাশিত হয়েছে তাঁর " নির্বাচিত প্রবন্ধ " সংকলন । বীরভূমের প্রথম শিশুদের পত্রিকা হিসেবে " চমচম  " পত্রিকা । চমচম পত্রিকাতে অনেক গুণিজন লিখেছেন । চমচম পত্রিকার সম্পাদক । নন্দন, মাসিক কৃত্তিবাস,আর্ষ,গৌতমী,যুগশঙ্খ, কবিতা আশ্রম, অনন্য প্রয়াস, গণশক্তি,হৃদয়ের কথা,সৃজন তৃষা, অভিমুখ সহ শতাধিক পত্রিকাতে লেখা প্রকাশিত হয়েছে ।দেশ বিদেশের পত্রিকাতে লিখেছেন । দেশ সাহিত্য পত্রে চিঠিপত্র বিভাগে  পত্রগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। তিনি কাঞ্চীদেশ সাহিত্য পুরস্কার( ২০১৩), "জিরো বাউন্ডারি সম্মান ২০২২'',কৃষ্ণশেখর আচার্য স্মৃতি সম্মান ২০২২' বঙ্গজন শারদ সম্মান ১৪২৬' ,নন্দিনী স্মারক সম্মান ২০১৪ ", ময়ূরাক্ষী নন্দিনী স্মারক ২০১২ সহ নানা সম্মাননা লাভ করেছেন। কবি সাদামাটা, গ্রামের মানুষ হিসেবে গ্রাম জীবনের চিত্র, হাভাতে মানুষের আর্তনাদ স্বচক্ষে দেখেছেন । তাদের করুণ কাহিনী, আচার-আচরণ, বিহ্বলতা প্রত্যক্ষ করেছেন খুব কাছের থেকে, তাই তাঁর কবিতার মধ্যে প্রেম-অপ্রেম, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, বাদ-প্রতিবাদ, সৃজন-সংগ্রাম, ইত্যাদি লক্ষ করা যায় ।