ঘাসনিবিলের পাড়ের মাটি ~ নাসির ওয়াদেন

 


এক


'চলে যাচ্ছি। কাল থেকে আর তোমাদের পড়াতে ইস্কুলে আসব না। তোমরা ভালভাবে পড়াশোনা করবে '-- বলতেই ক্লাশ শুদ্ধ ছেলেমেয়েরা সমস্বরে বলে উঠল,-- ক্যানে স্যার?

ঘড়ির কাঁটার দিকে তাকিয়ে দেখল তখন বেলা সাড়ে তিনটে। লাস্ট বেঞ্চে চুপচাপ বসে থাকা ছেলেটি বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়াতেই দিলশাদ স্যার জিজ্ঞেস করে, 'কি হয়েছে, কিছু বলবে?'

ছেলেটি ঘাড় কাত করে জবাব দিল, 'আর কুনুদিন এ্যাসবেন না স্যার!'

-- কেন আসব না। নিশ্চয়ই আসব। তবে আগের মত রোজ রোজ আসতে পারব না।

-- পনেরো আগষ্ট এ্যাসবেন স্যার?

-- ওই তো সামনের মাসে পনেরোই আগষ্ট, স্বাধীনতা দিবস। তোমরা না-বললেও পনেরো বছরের অভ্যেস কি আর হঠাৎ করে ত্যাগ করা যায়? বলে দাঁড়াতেই, পঞ্চম বেঞ্চে চুপচাপ বসে থাকা ছোট্ট মেয়ে নীপা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে,

-- স্যার, আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। কতদিন যে আপনার কথা ক্লাশে শুনিনি। পড়ার কথা বললে রাগ হতো, পাশের বন্ধুর সাথে শুধুই বকবক করে সময় কাটায়েছি। আপনি, শান্ত হতে বললেও শুনতাম না।

তারই পাশে বসে থাকা আয়েশা তার শালোয়ার কামিজের খুঁট ধরে ফুঁপড়ে কেঁদে উঠল। চোখ দুটো জলে ভর্তি, রুমালে চোখ মুছতে মুছতে বলল,

-- কত অন্যায় করেছি স্যার। আপনার পড়ানোর সময় বকর বকর করে গেছি। জল তেষ্টা না পেলেও জল খাওয়ার অছিলায় বাইরে গেছি, বাইরে বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়েছি।'

ডান দিকে বসে থাকা সদাসর্বদা ফাইফরমাশ খাটা সহদেব লোহার বলে, আপনি মাঝে মাঝে আসবেন তো স্যার?

--আসব। কণ্ঠ ক্ষীণ হয়ে আসে দিলশাদের।


ইস্কুল থেকে বিদায় নিয়েই বেরিয়ে পড়লেন দিলশাদ। দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অবসানে আজ নিজেকে তাঁর কতটা হালকা বলে মনে হচ্ছে, এ কথা বলা যায় না ভাষা দিয়ে, শুধু উপলব্ধি করতে হয়। তথাপি কোন এক অজানা বেদনা যেন তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে।

আহঃ, বাঁচা গেল। একরকম কারারুদ্ধ জীবন, অথচ কি মধুর। সেই রুটিন মেনে নিত্যদিন স্কুলে এসে ঘর দৌড় পরিষ্কার করানো, প্রার্থনা শেষে ক্লাসে ক্লাসে ঘুরে ছাত্র-ছাত্রীদের মনোযোগী করে তোলা। এরই মধ্যে এস এইচ জি দলের মেয়েদের ভাগ ভাগ করে আহার তৈরির জন্য ইস্কুলে দায়িত্ব দেওয়া। তাদের স্কুল আসা।

এসেই বলে, 'কোই গো মাস্টার, রান্নাঘরের চাবিটা কই? চাবির খোঁজ নিয়ে জিজ্ঞেস করে, আজ কি কি মেনু হবে, স্যার?

-- ডাল সবজি একটু বেশি বেশি করে দেবেন। ডিমের ডালনা করতে হবে।

হরেক রকমের কথা শুনতে হয় তাঁকে।


সত্যিই তো ঘণ্টা বাজার সাথে সাথে ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে হাজিরা নেওয়া , আজকে কতজন উপস্থিত আছে, তার মধ্যে কতজন খাবে , কতজন খাবে না, তার হিসেব করে চাল-,ডাল বের করে দেওয়া। গ্যাস ফুরিয়ে গেলে গ্যাসের ব্যবস্থা করতে বারবার ডিস্ট্রিবিউটরকে ফোন করা, কত কিই না করতে হয়।

গ্যাস আসতে দেরি হলে গ্রুপের মহিলাদের পরামর্শ , উপদেশে কান ঝালাপালা করে দেয়।

--স্যার, কাঠেরও ব্যবস্থা রাখতে হবে। হঠাৎ করে গ্যাস ফুরিয়ে গেলে কাঠ দিয়ে তো রান্না করা যায়। তারও ব্যবস্থা করা, ইত্যাদি ইত্যাদি ,,,


হরেককিসিমের লোকের উপদেশ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে যায় দিলশাদের। সেদিন তো পাঁচ তরকারি রান্না করতে করতেই গ্যাসের দম হাওয়া। অগত্যা বারবার ফোন করে ঘণ্টা দুই বাদে সিলেন্ডারখানা নিয়ে গ্যাসবাহক যখন বিদ্যালয়ে হাজির, ততক্ষণে বেলা দুটো পেরিয়ে গেছে। টিফিনের ঘন্টা দেড়টায়, ঘণ্টা বেজে গেলেও রান্না হয়নি বলে ছেলেদের ক্লাস চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

পেটের চো চো টানে ছেলেমেয়েরা উসখুস করছে। কি জানি কখন কে কি খেয়ে এসেছে। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় ইস্কুল। শহর থেকে কিছুটা দূরের ছোট্ট পাহাড়ের গা ঘেঁষে ঘাসনিবিলের পাড়ে ইস্কুল ঘর। নদীর জানালা দিয়ে বিলের জল দেখা যায়। বর্ষার সময় নদী যখন ফুঁসে উঠে তখন নদীর মাঝখানে জলের গর্জন শুনতে পাওয়া যায়।

গর্জন করতে করতে একদল মাঝবয়সী ছেলে হুড়মুড় করে ইস্কুলের ভিতর ঢুকে সোজা অফিস ঘরে। দিলশাদ তখন ফোন করছে গ্যাসওয়ালাকে।

-- ও হে মাস্টোর, ইবার ফোনটো কান থেকি রাখো তো। তারপর বলে, সারাদিন ফোন কোরবেন তো পড়্যাবেন কখুন?

বামপাশ থেকে বেঁটে, কালো, মাথায় বড় বড় চুল যে ছোকরাটার, তার নাম খুব সম্ভবত শাকির মোল্লা হবে। মনে করতে পারছে না দিলশাদ । সেই শাকিরই বলে ওঠে, মেলাই ন্যাড়া ভেলকিবাজি দেখ্যাছি, ইবার ফুন সরান। অনেক বেলা হয়ে গেল এখনো রান্না হলো না কেনে?

ভীড়ের মাঝখান থেকে কালোবরণ বলে ওঠে: মিস্টি কথায় হোবে না রে, মাস্টারকে সিধে করতে হবে। খুব বার বেড়েছে শা,,, পড়াশোনার নাম করি প্রেমিকার সাথে ফুনে গপ্পো করা হোচ্ছে? হাড় বজ্জাত শা,,,।

লজ্জায় কান দুটো লাল হয়ে গেছিল দিলশাদের। দিনরাত কসরত করে কিভাবে স্কুলের ছেলেমেয়েদের ভালো শিক্ষা দে'য়া যায়, তার জন্য কত তাঁর প্রণিপাত। আর এরা আবার কি বলে?

একরাশ অপমানের জ্বালা বুকে ধরে সেদিন মনঃকষ্ট নিয়ে বিদ্যালয় থেকে ফিরে আসে বাড়ি।


দুই



' বলি, শুনছো সোহাগির মা, কুসুমলতা। এদিকে একবার এসো না, তাড়াতাড়ি এসো ।' বলে ডাক দিল দিলশাদ।

উঠানের এক কোণে তালপাতার চাটাই মেরামত করছিল কুসুমলতা। মুখ তুলে বলে, আবার কি হলো গো, অমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছো কেনো?

-- ষাঁড়!

আমাকে দেখে তোমার ষাঁড় মনে হচ্ছে ? বলি, আমি কার ঘরের শিং ভেঙেছি বলো ? বলো ?

-- ষাঁড়ই তো। ষাঁড় না হলে এরকম জোরে কেউ চিৎকার করে।

-- আমি চিল্লাই ?

বলি, ইস্কুল, ইস্কুল করি তো সারাটো জীবন কাটাইলা। কি প্যালা তাতে? একবারও তো এই লণ্ডভণ্ড সংসারটোর দিকে ভালো করি দেখল্যাই না।

-- কি কথা বলছ সোহাগির মা? আমি মাস্টার, সমাজের বন্ধু। আমার প্রথম কাজ ইস্কুলে যাওয়া, ছেলেমেয়েদের শিক্ষা দান করা।

-- রাখো তুমার ইস্কুল! রাখো তুমার ইস্কুল পিরিতি। সারাটা জীবন তো ইস্কুল, ইস্কুল করি মরলে, কি পেলে বলো তাতে? ওই তো, ওই তো সেদিনে ইস্কুলে গার্জেনদের কাছে থেকি কত কটু কথাই না শুনল্যা। ওরা কি তুমাকে মানুষ মুনে করে, না কোরতে পেরাছে। ওরকুম ভাষা তো মানুষ জানোয়ারকেও করে না। ছাত্র হয়ে শিক্ষককে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ! এসব করা কি বন্ধ করতে পেরেছো?



সত্যিই তাই। কুসুম তো একশো ভাগই ঠিক কথা বলছে । তবে কি সে সত্যিই এক ব্যর্থ শিক্ষক। ব্যর্থ মানুষ হয়ে শিক্ষার বদলে ছাত্রদের অশিক্ষার পাঠ দিয়ে এসেছে এতদিন? নিজেকে অপরাধী, ঘৃণাবোধ করে দিলশাদ।

-- আর তো তিনটে মাস মাত্র।

তারপর -- তারপর সারাজীবনের মতো ঘরে বসে থাকব। না, আর কোন ছাত্রের কাছে, না, কোন অভিভাবকের কাছে নৈতিক জ্ঞান পেতে হবে ।

আর এইতো হাতে গোনা কয়েকটা দিন, তারপর তো বিন্দাস হয়ে ঘুরে বেড়াব। ঘর সংসারে মন দিব। তোমার চোখে চোখে থাকব। কেউ জ্বালাতন করতে আসবে না 'খন।

রান্নাঘর থেকে হাঁড়ি বাসনের ঝনঝন আওয়াজ ভেসে আসে দিলশাদের কানে।

-- ইস্কুল ছেড়ি দিলে কী কোরব্যা?

মনের ভিতরটা একখানা কালো মেঘে ঘিরে ফেলে। এক নিবিড় অন্ধকার ছায়ায় মন ছেয়ে যায় নিমেষে।


তবুও কষ্টের হাসি হেসে বলে, ওই কেন গো? জমি জায়গা দেখাশোনা করব। চাষবাসে মন বসাব।

--কতই রঙ্গ দেখি আমি রঙ্গালয়ে । ঠিক আছে, দেখবো, তুমার মুন কোথা পড়ি থাকে? বাড়িতে থাকতে পারব্যা তো ?

তাইতো বড় কষ্ট হবে তার । ছোটবেলা থেকে আদর্শ শিক্ষক হওয়ার বাসনা নিয়ে লেখাপড়া করে গেছে একনাগাড়ে। পড়াশোনায় ঘামতি হতে দেয়নি। ভালো রেজাল্ট করেই তো কলেজে পড়তে পড়তেই চাকরিটাও পেয়ে গেছিল। সেই যে শুরু তো থামার শেষ নেই।


তিন



স্কুলের পাট ঢুকিয়ে দিয়ে বাড়িতে বসে সময় কিছুতেই কাটে না তার । সত্যিই তো, কি করে সময় কাটবে। তবুও কচিকাঁচাদের বকাঝকা, কটু মন্দ কথা বলে, কখনো সহজ সরল ভাষায় বুঝিয়ে দিয়ে নীতি পাঠ দেওয়ার বহু চেষ্টা, কসরত করতে কসুর করেনি। তার মধ্যে সবাই কি খারাপ। না, গোবরেও তো দুএকটা পদ্মফুল ফোটাতে পেরেছে। ভালো ভালো পোস্টে চাকরিও করছে। ওদের দেখলে মুখ, বুকখানা ভরে উঠে তার । যখনই ওঁরা গাঁয়ে আসে, ইস্কুলে পা রেখে ওরা বলে, কেমন আছেন স্যার। তখন কত আনন্দ হয়। জীবন সার্থক হয়েছে বলে মন আপ্লুত হয়। আবার ওই রকম ছেলেদের দল এসে যখন বিদ্যালয় ভাঙচুর করে, খিস্তি -খেউরও কাটে, গালিগালাজে বুক ভরে দেয়, তখন ছোট্ট কঠোর বুকখানা ছ্যাঁক করে কেঁপে ওঠে । এই দুনিয়া তো ভালো-মন্দ, আলো-আঁধার, সুখ-দুখ, আহ্লাদ-হতাশা, জোয়ার-ভাটা দিয়ে নির্মিত। তেমনি তো ভালো ছাত্রের সাথে বকাটে ছাত্রেরও সন্নিবেশ ঘটবে, না হলে সমাজ চলবে কি করে।

এসব কথা ভাবতে ভাবতে দিলশাদ আনমনা হয়ে যায়। কুসুম আজকাল কেমন যেন অন্যরকম মেয়ে হয়ে উঠছে। ওর দিকে তাকাতে পারে না সে । চোখ দুটো যেন আরো আরো কিসের জন্য উৎসুক । অতি অল্পে সন্তুষ্টি নেই , বিশাল বিশাল স্বপ্ন তাকে তাড়া করে,তার মাথায় কিসব কিলবিল করে। কথায় কথায় খোঁচা মারে তাকে।

-- বলি, সোহাগি তো বড় হলো। ইবার একটা ভালো ছেলে জোগাড় করে বিহাটা দাও না, বাপু।

সারাটা জীবন চাকরি করেও টাকা জমাতে পারেনি দিলশাদ। যা বেতন পেত, সংসারের চাকায় ঘুরে ঘুরে নিঃশ্বেষ হয়ে যেত। মুদির দোকানে মাস অন্তে ধার পড়ে যেত। মুদি মাস শেষ হতেই বলত,' বাবা বেতন হলো? অনেক ধার হয়ে গেছে যে। আমার তো পুঁজি পাটা কম। দোকান চালাবো কি করে? '

বয়স হয়েছে দিলশাদের। শরীরও বেশ দুর্বল হয়ে পড়ছে দিন দিন । একদিকে বাতের রোগ, অন্যদিকে ডায়াবেটিসের আক্রমণ। সাঁড়াশি সে দিশেহারা আক্রমণের মুখে পড়ে। রক্ত পরীক্ষা করে এসেছে গতকাল। আজকে রিপোর্ট আনতেই যাচ্ছে শহরে। তিন মাস আগেও একবার রক্ত পরীক্ষা করে এসেছিল। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে বলেছিল, মাস্টার মশাই, একটু চিনি, মিষ্টি কম খান। ভাতও বেশি করে খাওয়া যাবে না। শাকসবজির উপর বেশি জোর দিন। সকাল বিকেল আধ মাইল করে হাঁটুন।

-- খুবই কি সুগার বেড়েছে ডাক্তারবাবু?

-- বেড়েছে কিছুটা।ওই ফাস্টিঙ্ এ ১২০,পিপি ১৮৭। এটাকে নরম্যাল করতে হবে। এই ঔষধগুলো নিত্য নিয়ম মেনে খাবেন। বলে, ডাক্তারবাবু একখানা প্রেসক্রিপশন তার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল।


কিছুটা নিয়ম পালন করেই গতকাল আবার রক্ত দিয়ে এসেছে দিলশাদ। হাসপাতালে ঢুকে আউটডোরে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । আউটডোরে নাম রেজিস্ট্রেশন করে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশ্যে। ডাক্তারবাবুর কাছে বসে থাকা একজন অফিস স্টাফ এসে তাকে বলে,

'আপনাকে ডাক্তারবাবু ডাকছেন। '


'ধড়াস্' করে বুকখানা কেঁপে উঠে তার। তবে কি ব্লাড সুগারটা আরো বেড়ে গেছে। তিন মাস ধরে তো কোন অনিয়ম করেনি সে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে লাইনে।

ডাক পেতেই,' কিছু বলছেন ডাক্তার বাবু!' বলে দাঁড়িয়ে যায় ডাক্তারবাবুর সামনে। মুখখানা নিচু করে ডাক্তারবাবু উত্তর দেন, ' ডাক্তার বাবু বলবেন না, আমি অবিনাশ।'

'অবিনাশ!' মুখ ফসকে কথাটা বেরিয়ে এলো দিলশাদের। 'তুমি কি অনাদি কাকাবাবুর নাতি?'


--তাহলে চিনতে পেরেছেন বুঝি।


আনন্দে দুচোখে জল নেমে আসে দিলশাদের।

-- বলি বাবা, তুমি ডাক্তার হয়েছ?

সেই ক্লাস থ্রিতে তোমাকে দেখেছি। তারপর তো তোমরা কলকাতা চলে গেলে বাবার সাথে।

-- হ্যাঁ গো, ঠিক তাই । আপনার সুগার কমে গেছে। একদম স্বাভাবিক।।

--কমবে না? আরে তোমার মত ছেলেকে ডাক্তার হতে দেখলে কোন মাস্টারের সুগার কমবে না বলো।

সুগার বাবা বাবা করতে করতে নেমে যাবে।


-- ঠিক আছে। এই ওষুধগুলো লিখে দিলাম । আপনি ওষুধগুলো নিয়ে খানিকটা পরেই আমার চেম্বারে চলে আসুন । একটা খবর আছে, আমি চাই, আপনি তাতেই ইনভলব থাকুন।

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে এলো দিনশাদ। তার চোখে মুখে প্রশান্তির হাসি। জীবনে ভালো কাজ করার সুযোগ থাকলেও কখন পূর্ণতা পায়নি। এবার সেই পূর্ণতা প্রাপ্তির সুযোগ সামনে চলে এসেছে তার।


'শুনছো কুসুম? শুনছো? তোমার নামে দাতব্য চিকিৎসালয় হবে। ঘাসনিবিলের পাড়ের সেই জমিটা, যা এতদিন পতিত থেকে আগাছায় ছেয়ে আছে, সেইখানে হবে হাসপাতাল। আমি কথা দিয়ে এসেছি কুসুম , আমি কথা দিয়ে এসেছি। '

বলতে,বলতে ছুটে যায় গাঁয়ের দিকে।

" কুসুম লতা স্মৃতি দাতব্য চিকিৎসালয় কেন্দ্র"-- কুসুম চলে গিয়ে নতুন করে ফিরে এসেছে দিলশাদের বুকে। প্রশান্ত নদীর বুকে জোয়ারের জলের মতো উথলে উঠছে দিলশাদের মনের নদীটা।