ছিল নেই মাত্র এই ~ হীরক বন্দ্যোপাধ্যায়

 



অলক আর অলকা বিয়ে করেছিল পরিবারের অমতে। ছেলে রাজা হবার সময়ই যে অলকা ওদের ছেড়ে চলে যাবে ভাবতে পারেনি অলক। রাজার মা বাবা বলতে তো সে ই। সে দেখে রাজার মুখের দিকে তাকালেই অলকার কথা মনে পড়ে। তখন সে রাজাকে সহ্য করতে পারেনা। রাজা যদি না আসতো তাহলে তাকে যেতে হত না। এমনকি তার নিজের উপরেও রাগ হয়। সে কেন ....কি এমন তাড়া ছিল ...


দেরাদুনে হোস্টেলে থাকে একা একা। সকালে ফোন না পেলে ছেলেটা কাঁদে। একেবারে মায়ের মতো হয়েছে  নরম। অফিসের কাজের বাইরে অলক বন্ধু বান্ধবদের সাথেই সময় কাটায়। ক্যারাম খেলে। তাস খেলে।


বাড়িতে গেলেই তো সে একা অলকার ছবির দিকে তাকালেই চোখে জল আসে। আত্মহত্যার কথা মাথায় ঘুরতে থাকে। তার বাবা মা কাকু কাকীমা জেঠু জেঠিমা ঠাকুর্দা ঠাকুমা সবাইকে নিয়ে এক বৃহৎ একান্নবর্তী সংসার।


ধর্মতলায় এক দিন দেখা হয়ে ছিল কাকুর সাথে
বলেছিল চল, বাড়ি ফিরে চল।
সবাই তোর রাজার কথা বলে।
না, সে যেতে পারেনি। তার অলকা'কে ছেড়ে যাবে কোথায়?


বাড়িটা বানিয়েছিল ঠাকুর্দার বাবা। হাইকোর্টের ব্যারিষ্টার ছিল। নীচে চারটা উপর ঐ চারটা ঘর। সে যখন ছোট ছিল গমগম করত। এদিকে ধর্মতলা বাসে কুড়ি মিনিট, শিয়ালদাও তাই, আলিপুর ম্যাকসিমাম আধঘণ্টা। অলক ছিল ওদের চোখের মণি। কানপুর আইআইটি থেকে পাশ করার পর বাড়ির লোকেদের কী স্বপ্ন। সব এক নিমেষে ধূলায় ধূসরিত হয়ে গেল। অলকা তার জীবন হয়ে গেল। সেই অলকা. ...। চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। না রাজার ফোন আসছে। ছেলেটার জন্য বাঁচতে হবে তাকে।

 


হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় একজন ভারতীয় লেখক কবি ও ঔপন্যাসিক। মূলতঃ বাংলা ভাষায় লেখেন। নন্দন পরিচয় অনুষ্টুপ এবং মুশায়েরা একুশ শতক দিবারাত্রির কাব্য কথাসাহিত্য ইত্যাদি কাগজ তার লেখনভূমি। ইতিমধ্যেই চারটি গল্প গ্রন্থ, দুটি উপন্যাস, আঠারোটি কবিতার বই প্রকাশিত। চার্জড ফার্নেস এখন ব্লোয়িং চলছে তার বহুল প্রচারিত গল্প গ্রন্থ। এই সব চিরকাল তার বিখ্যাত উপন্যাস। সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশটির বেশি পুরষ্কারে ভূষিত হন তিনি।