বছরের এই সময়টা বড়ো মনকেমনিয়া, বাতাসে ঝরাপাতার মর্মর,শিশিরভেজা ঘাসে নির্ভার বিধুরতা। সেদিন ভোরে ঘুম ভেঙে দেখলেন হৈমন্তী, নিচের বাগানে লকলকিয়ে ওঠা শিমলতায় ফুল ছোঁয়াচ্ছে কেউ। কি অদ্ভুত!এরপরেই গাছ ভরে যাবে গুচ্ছ গুচ্ছ ফলে! সেদিকে তাকিয়ে, হঠাৎ বড়ো লজ্জা পেলেন প্রৌঢ়া। এইসব ভোরের আলোয় কতো কথা মনে পড়ে;নিজের মনের কাছেও লুকিয়ে রাখা বড়ো গোপন সেসব লজ্জাকথা!
স্মৃতির ঢেউ ভেঙে আজকের পাকা গিন্নীর মনে পড়তে থাকে সেই কোন নবযৌবনবেলায় এবাড়িতে বৌ হয়ে আসার কথা, নতুন জীবন, শাশুড়িমায়ের কাছে নেওয়া সংসারপাঠ… মনে পড়ে, বিয়ের বেশ কয়েক বছর কেটে গেলেও সন্তান না আসায় পাড়াপ্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজনের গঞ্জনা থেকে আগলে রাখা ঘরের মানুষটির কথাও। তবে বড্ড ভয় পেতেন তখন রাশভারী মানুষটিকে ।
অন্যদিকে,ওনার বাল্যবন্ধু সুকান্তদা ও রীতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিলো আন্তরিক। এমনই কোন একদিনে, ভরাপোয়াতী রীতা ছেলে বিয়োতে কয়দিন পরেই বাপের বাড়ি চলে যাবে শুনে, হৈমন্তী গিয়েছিলেন সখীর সঙ্গে দেখা করতে। গল্পে-গল্পে সন্ধ্যা নামে, তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে ফেরার পথে কখন যে খিড়কিপুকুরের বাঁশঝাড়তলায় পেঁচার ডাকে ভয় পেয়ে ছুটতে শুরু করেছিলেন, মনে নেই; হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে একটি শক্তহাত ধরে ফেলেছিলো তাঁকে;তিরতির কাঁপতে কাঁপতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ঘামগন্ধী কোন চওড়া বুকে।
সম্বিত ফিরতে দেখেন, কি লজ্জা! কি লজ্জা! সুকান্তদা যে! তখন তাঁর ধরণী দ্বিধা হও অবস্থা; তারমাঝেও কেমনতরো শিহরণ…
একদৌড়ে বাড়ি, মনে মনে অন্যতর বাঁশি। রাতের যুগলশয্যাও কী যেন এক অপূর্ব উন্মনে ভরে উঠেছিলো সেদিন; শুধু চুড়ান্ত তৃপ্তিলগ্নে স্বামীর দামী ওডিকোলনের গন্ধ ছাপিয়ে অন্য কোন পুরুষালী ঘামগন্ধ নারীশরীরের রন্ধ্রেরন্ধ্রে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো;উন্মত্ত করেছিলো তাঁকে।
এতোদিনকার সুশীলা ঘরণীর এমন রঙ্গিনীরুপে অবাক হয়েছিলেন রমনতৃষিত পুরুষটিও।
তার ক'য়দিন পরেই এসেছিলো কাঙ্ক্ষিত সুসংবাদ। শাশুড়িমা পাড়ায় মিষ্টি বিলিয়েছিলেন নাতি আসার আনন্দে। পরে পরে যে যার সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, আরও দুটি ছেলেমেয়ের গর্ভধারিণীর সময় হয়নি আর পাড়াপ্রতিবেশীদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রাখার… দিন গড়িয়ে গেছে, এখন সবাই দূরে দূরে। তবু বিশেষক্ষণে, স্পর্শাতীত কিছু মনে পড়ে বইকি! পড়েই…