আড়াআড়ি গার্ডার মোড়া প্যাকেটে চারটে মতিচুরের লাড্ডু দিয়ে গেছে তন্দ্রার মা।
কুড়ি বছর আগের একটা মুহূর্ত হঠাৎ যেন ভেড়ুল হাওয়ার মত পাক খাচ্ছে নিঃসঙ্গ অবনী বাবুর খাঁ খাঁ হৃদয় জুড়ে।
তাঁর অয়নও তো এমনই আলোড়ন তুলেছিল মাধ্যমিকের ফল বেরোনোর দিন। খুশির ঢেউ উপচে পড়েছিল তাদের সংসারে। ওর মা, এমনি মিষ্টির প্যাকেট বিলিয়েছিল সেদিন।
অয়ন শুধু পাঠ্যবইয়ে বন্দী ছাত্র ছিল না,
ছিল এক স্বতন্ত্র জ্যোতিষ্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিটি পরীক্ষাতেই ছিল সাফল্যের জয়গান। সোনালী পদক উঠেছিল তার মুঠোয়।
অথচ নিয়তির কী নির্মম পরিহাস!
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় গবেষক, একদিন ‘অযোগ্য’ শিক্ষকের তকমা মাথায় নিয়ে, চিরতরে বিদায় নিল পৃথিবী থেকে।
সময়ের নিষ্ঠুর স্রোতের চোরা ঘূর্ণিতে এক প্রতিভার অপমৃত্যু, ঘুমের ঔষুধে স্বপ্নের অকাল সমাধি।
অস্ফুট কণ্ঠে বিড়বিড় করে মতিভ্রান্ত অবনীবাবু তাই মতিচুরের প্যাকেটটাকে শুধিয়ে বসলেন,
“কেউ আবার তোকে কোনো দিন অযোগ্য বলবে না তো?”
টপটপ করে গড়িয়ে পড়া নোনাজলে ভিজে যাচ্ছে মতিচুরের প্যাকেট। পুত্রহারা পিতার দীর্ঘশ্বাস মিশে যাচ্ছে প্রতিবেশীর সাফল্যের হাসির বিপরীতে।
তার বুকের মধ্যে এতক্ষণে লহরা দিয়েছে এক করুণ সুর, তারই প্রতিধ্বনি শোনায় - "আমার অয়ন... 'অযোগ্য' ছিল না, ও আমার ইউনিভার্সিটির টপার ছিল।"