আঁধারের পাকে পাকে ~ মৌসুমী ঘোষ দাস



               
নববধূ নিতু সকালে স্নান সেরে ভেজা চুলে স্নানঘর থেকে সবে বেড়িয়েছে, আর অমনি শাশুড়ি মৃণালিনী দেবী বধূর দিকে রে রে করে তেড়ে গেলেন,

- বলি অ বউমা, তোমার মতলবটা কি শুনি? ছেলেটাকে আমার খাবে নাকি? বাছা আমার কাজের জন্য দূর দেশে একা থাকে! তোমার এই সৃষ্টিছাড়া কাজকম্মের জন্য তার কখন কি ঘটে যায়, সে খেয়াল কি আছে তোমার?

- [বিস্ময়ে হতবাক হয়ে] কেন মা? আমি কি এমন কাজ করেছি যে, আপনার ছেলেকে খাওয়ার কথা উঠছে?

- উঁ—উঁ, জানো না, আজ বৃহস্পতিবার! আর তুমি কি না আজ লক্ষ্মীবারেই মাথা ঘষলে? জানো না, লক্ষ্মী বারে মাথা ঘষলে স্বামীর অমঙ্গল হয়? বয়স তো কম হল না! বলি, মা কি এই শিক্ষাটুকুও দিয়ে পাঠান নি?

- [ভীত কণ্ঠে] না মা, আমার মা কুসংস্কার মানেন না। আমার মাকে তো লক্ষ্মীবারেও মাথা ঘষতে দেখেছি। কই তার জন্য তো কখনও আমার বাবার অমঙ্গল হতে দেখিনি? বরং মায়ের যত্নে আমার বাবা ভালই আছেন। তাছাড়া আমি তো কখনও এই নিয়মের কথা আগে শুনিনি।

- [মুখ ভেংচে] উঃ!! কখনও আগে শুনিনি! ধাড়ি মেয়ে! ন্যাকা সাজা? মুখে মুখে কথা বলবে না বলে দিচ্ছি। আমার বাড়িতে যেন এমন সৃষ্টিছাড়া কাজকম্ম আর কখনও না দেখি, মনে রেখো কথাটা।

তরুণী নববধূটি ছলছল চোখে অসহায়ভাবে মাটির দিকে চেয়ে রইল। মুখে আর কিছু বলল না। মনেমনে শুধু ভাবল, এ কেমন নিয়ম! স্ত্রী বৃহস্পতিবার মাথা ঘষলে স্বামীর অমঙ্গল হবে? স্বামী বৃহস্পতিবার মাথা ঘষলে স্ত্রীর অমঙ্গলের কথা কেউ তো ভাবে না! না কি স্ত্রীদের মঙ্গলের জন্য তেমন কোন নিয়মই নেই এই সংসারে! আর শাশুড়ি মা যদি নিজেই এত নিষ্ঠাবান হন, তবে শ্বশুর মশাইকে কেন এত তাড়াতাড়ি পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হয়েছিল? নিয়ম-আচার দিয়ে তাকে ধরে রাখতে পারলেন না কেন? আমাদের দেশের এমন হাজার হাজার নিতুর মত গল্পের এই নিতুর মনেও সারাদিন শুধু এই প্রশ্নগুলি পাক খেতে লাগল।

মৌসুমী ঘোষ দাস