আমাদের দীপ্ত মানে দিপু বরাবরের সাহসী ও ডাকাবুকো ছেলে। ভুত টুতে একদমই বিশ্বাস নেই তার। একদিন দিপু আর বন্ধু তাপস নাইট শোয়ে ‘হন্টেড’ সিনেমা দেখে বাড়ি ফিরছিল। চিরকালের ভীতুর ডিম তাপসের বিশেষ অনুরোধে দিপু তাপসকে তার মেসবাড়ির গলি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে একা হেঁটেই নিজের হস্টেলে ফিরছিল।
রাত এগারোটা বেজে গেছে তখন। অমাবস্যার রাত। তবে রাস্তায় আলো সব জ্বলছিল। হস্টেলে যাওয়ার পথে ডান হাতে একটা মর্গ আছে। সেটার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দিপু নিজের অজান্তেই মনে মনে ভাবল, এখন যদি রাস্তার এই আলোগুলো নিভে যায়, তবে বেশ মুশকিলে পড়তে হবে, কারণ সঙ্গে টর্চ নেই। ভাবতে ভাবতেই ঝুপ করে রাস্তার আলোগুলো সব নিভে গেল। চারদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিছু দেখা যাচ্ছে না। দিপু একটু ঘাবড়ে গিয়ে হনহনিয়ে হাঁটতে লাগলো।
মর্গটা পেরুলেই ওর হস্টেল। মনে মনে ভাবল, যা মিশমিশে অন্ধকার, এখন যদি কোন কিছুর ওপর পা পড়ে, কি যে হবে? ভাবতে ভাবতেই একটা নরম বড় বস্তুর ওপর পা পড়লো। আর সেই বস্তুটি রেগে ঘেউ ঘেউ করে দিপুর দিকে তেড়ে এল। সে তাড়াতাড়ি হ্যাট হ্যাট করে বস্তুটিকে তাড়িয়ে সোজা হেঁটে হস্টেলে ঢুকে গেল। আর তখনি বিদ্যুৎ চলে এলো।
দিপু হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। হোস্টেলের সবাই নীচতলায় ডাইনিং হলে রাতের খাবার খেতে গেছে। কেউ বা নিজের ঘরে দোর দিয়ে লেখাপড়া করছে। টেনশনে আর গরমে প্রচণ্ড ঘেমে গিয়েছিল দিপু, তাই স্নান করতে বাথরুমে গেল। স্নান ঘরের শাওয়ারের পাইপটা একটু বেঁকা ছিল। কারণ, এই হস্টেলের একটি ছেলে নাকি র্যাগিং সইতে না পেরে এই শাওয়ারের পাইপেই ঝুলে আত্মহত্যা করেছিল, আর তারপর থেকেই এই পাইপটা এমন বেঁকে আছে। অন্যদিন কিছু মনে না হলেও আজ যেহেতু আসবার সময় দুটো কাকতালীয় ব্যাপার ঘটেছিল তাই স্নান করতে করতে বার বার শাওয়ারের পাইপে দিপুর চোখ আটকে যাচ্ছে আর মনে মনে একটু ভয় পেয়েই ভাবছে, ইস! এখন যদি লাইন চলে যায়!
ব্যস, অমনি আবার ঝুপ করে লাইন চলে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তখন দিপুর কেবল মনে হতে লাগলো, বাথরুমে তার সাথে বুঝি কেউ আছে। অমনি একটা বরফ-ঠাণ্ডা নিঃশ্বাস যেন তার গায়ে এসে পড়লো। আসলে ওর ভিজে গায়ে বাথরুমের ঘুলঘুলি দিয়ে বাতাস এসে একটা ঠাণ্ডা অনুভূতির সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু দিপু প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ওই অন্ধকারে এক ছুটে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এল। কিছুক্ষণ পর ওর বন্ধুরা ওকে ওর ঘরের মেঝেতে অজ্ঞান অবস্থায় আবিস্কার করল।
===============================