কাজের মেয়ে মালতী আজ না বলে কয়ে ডুব মেরেছে, তাই রুনার আজ সকাল থেকেই মাথা গরম। যত রাজ্যের কাজ এখন ওকে একা হাতেই সামলাতে হচ্ছে। ঘর ঝাড়া-মোছা, বাসন মাজা তো আছেই। তারপর কুটনো কোটা, রান্না করা এমনকি কাপড় কাঁচা পর্যন্ত। রুনার মুখের হাসি উধাও, বিরক্তিতে ভ্রু দুটো কুঁচকে আছে।
এরই মধ্যে আবার মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। দিনুবাবু মানে রুনার শ্বশুর মশায় আজ সকালে হাওয়াই চপ্পল পরে বাথরুমে গিয়ে স্লিপ করে পরে গেছেন। সে এক কেলেঙ্কারি কাণ্ড! ঈশ্বরের কৃপায় তেমন সাংঘাতিক কোন চোট না লাগলেও পা টা ফুলে আছে । অফিস যাওয়ার আগে অনেক কষ্টে টেনে টুনে সোজা করে গরম চুন হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে প্রিয়নাথ দিনুবাবুর একমাত্র ছেলে। রুনাকে বলে গেছে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে।
রুনা কড়াতে তেল গরম করে কেবল মাছটা ছেড়েছেন। এমন সময় কলিং বেল। রুনার ভ্রু দুটো আরও কুঁচকে গেল। এই কাজের সময় কলিং বেল বাজলে বিরক্তি লাগে। ঘরে দুজন মানুষের মধ্যে একজন তো পা মচকে বিছানায় শুয়ে আর আরেকজন রান্নাঘরে ব্যস্ত। অগত্যা রুনাই নীচে নেমে এসে সদর দরজা খুলতেই দেখে একদল লোক! – আজ্ঞে, কাকে চাই?
- বউদি আমরা স্বরলিপি পার্টি থেকে এসেছি। তরমুজের বিচির মত দাঁত বার করে দলের একজন বলল।
- দেখুন আমাদের তো এখানে --
- কিছু ভাববেন না বউদি। আমরা আপনার ঘরের ছেলে। বিপদে আপদে আমরাই তো আছি। যখন ডাকবেন, তখনি কাছে পাবেন।
- দেখুন আমার কথাটা একবার--
- আরে বউদি আমাদের প্রার্থী এক নম্বরেই আছে।সকাল সকাল চলে যাবেন, আপনারা কোন দিকে না তাকিয়ে শুধুমাত্র এক নম্বর বোতামটা টিপে আমাদের ঘরের ছেলে হৃদয়দাকে ভোট দিয়ে জেতাবেন। দাদাকে দেখছি না যে, আর মেসমশায় কোথায়?
-দাদা কিছুক্ষণ আগে অফিস বেরিয়ে গেছেন। আর আজ সকালে শ্বশুর মশায়ের পা টা মচকেছে। উনি ওপরে বিছানায় শুয়ে আছেন। আসলে আমাদের তো এখানে - -
-কিছু ভাববেন না বউদি। কোথায় দেখি মেসমশায়? আমরা ঘরের ছেলে থাকতে মেসমশায় বিছানায় শুয়ে কষ্ট পাবেন কেন? কই দেখি- বলেই রুনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই সিঁড়ি বেয়ে প্রার্থী হৃদয় বাবু সদলবলে ওপরে দিনুবাবুর ঘরে এসে হাজির।
-কে ? এনারা সব কে বউমা?
-এই যে মেসমশায়, আমরা এসেছি ঘরের ছেলে, স্বরলিপি পার্টি থেকে।
-তা এখানে কেন? তাছাড়া আমার শরীরটা ভাল নেই। আজ-
-একদম ভাববেন না মেসমশায়! এই ঘোতনা আর পটলা তোরা একটা রিক্সা ডেকে মেসমশায়কে হাসপাতালে নিয়ে যাবি। দাদা অফিসে, বউদি একা। আমাদেরই তো দেখতে হবে! আমরা হলাম গিয়ে ঘরের ছেলে! আমাদের থাকতে আপনাকে কিছুতেই কষ্ট পেতে দেবো না। শুধু এক নম্বরে লাঠি চিহ্নে আমাদের ভোটটা দেবেন।
-কিন্তু বাবা আমরা তো ছমাস হল এখানে ভাড়া এসেছি। আমাদের তো এখানে ভোট নেই। আমাদের তো গ্রামে, তাও আবার পঞ্চায়েতের ভোট।
প্রার্থী হৃদয় বাবু চোখ গোল করে হা করে ভ্যাবলার মতো খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলেন, তারপর সদলবলে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে নামতে সাঙ্গোপাঙ্গদের জোর ধমক দিলেন- আগে ভাল করে খোঁজ নিতে পারিস না? ফালতু খানিকটা সময় নষ্ট হল! চলি বউদি। অন্য একদিন এসে মেসমশায়ের সাথে গল্প করে যাবো। রুনা বিস্মিত হয়ে ঘরের ছেলেদের যাওয়ার পথের দিকে চেয়ে রইলো।