ফিরে দেখা ~ মৌসুমী ঘোষ দাস



                                                                 


কেস নং ৪১৯ ~ অরুণ চট্টোপাধ্যায়





-
বিয়েবাড়ীতে লোক গিজ গিজ করছে। ঘন ঘন শাঁখ আর হুলুধ্বনি। হাসি, হুল্লোড় আর আনন্দ। সম্প্রদানের কাজ হতে যাচ্ছে। বর প্রস্তুত। কিন্তু কনের চোখে হঠাৎ জল। হাতটাও বিশেষ এগোতে চাইছে না। হবেই তো। হয়ত সকলকে ছেড়ে যাবার দুঃখে। কিন্তু বর একটু ভুরু কুঁচকে তাকিয়েছে কনের দিকে। তাই দেখে বরের বাবা কড়া চোখে তাকিয়েছে কনের বাবার দিকে।

- ব্যাপার কি মশাই? প্রশ্নটা কনের বাবার প্রতি। কনের বাবার চোখটা যেন মুর্গী চোরের মত। বরও হাত গুটিয়ে নিয়ে তাকিয়ে আছে কনের দিকে।

কনে ভেঙ্গে পড়েছে কান্নায়। এ বিয়ে তো সে করতে চায় নি। বাবা মায়ের চাপে পড়ে করছে। বিজয় একটা সামান্য বই-খাতার দোকান চালায়। তার স্ট্যাটাস খুব সামান্য কিন্তু তাদের ভালবাসার স্ট্যাটাস সামান্য বলে মনে করে না কুন্তলা। তাদের সাত বছরের প্রেম-ভালবাসার সম্পর্কটা কম্পিউটার ইঞ্জিনীয়ার অলোক এসে ভেঙ্গে দেবে তা ভাবতে পারে নি।

সানাইয়ের সুর ছাপিয়ে উঠল কিরণবাবুর গলা, ইউ আর এ চিটার। আই স্যাল টিচ ইউ এ গুড লেসন। মেয়ের প্রেম লুকিয়ে বিয়ে দেবার চেষ্টা! ফোর টোয়েন্টি একটা।

তিরের মত বেরিয়ে গেলেন। থানার পথটা খুঁজে পেতে বেশী বেগ পেতে হল না। দারোগা সাহেব সব শুনে বললেন, হু চিন্তা করবেন না। এই সব লিখে নিলাম। কেস নং ফোর নাইটিন্টিন কেমন? সব আরেস্ট করছি। এক্ষুনি।

কিরণবাবু বললেন, আহা ফোর নাইন্টিন নয় ফোর টোয়েন্টি। জালিয়াতি।

দারোগা হাসলেন, সে তো ধারার নম্বর মশাই। এটা হল ডায়েরির নম্বর।

বরের বাবা ফিরে এল কিন্তু বর তো ফিরে এল না। ও আবার কোথায় গেল? ওকে তো অনেকক্ষণ আগেই থানা থেকে পাঠিয়ে দিয়েছেন কিরণবাবু। তাকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে জোর করে বিয়ে দেওয়াচ্ছে না তো? হতেও পারে।

ভেতরে অবশ্য বিয়ের আসর বসেছে একটা। বেশ জমজমাট। সানাইয়ের সুর উঠছে সপ্তমে। মেয়ের বাবা ছাড়া উপস্থিত আর সকলের মুখেই হাসি আর খুশিতে ভরা। হোমের আগুন আবার জ্বলেছে। ফিরে এসেছে হুলুধ্বনি। এ কি হল? তাঁর মানে মেয়ের বাবার অমতেই বিয়ে? নিজে মনে মনে ওই হোমের আগুনের কাঠগুলোর জ্বলে পুড়ে মরছেন কিরণবাবু।

গেটটা পেরোতেই বিয়ের আসর। হোমকুন্ডলীর চারপাশে বর বউ পাক খাচ্ছে। সাত সাতটা পাকের শর্ত পূরণ হলেই বিয়ে শেষ। কিছু তো একটা করতেই হবে। এদিকে দারোগার তো পাত্তাই নেই। নিজেকেই যা হয় একটা কিছু করতেই হবে। এ বিয়ে আটকাতেই হবে।

কিন্তু বরের জায়গায় তো তাঁর ছেলে অলোক নয়? এ তো একটা নতুন ছেলে। দেখে মনে হচ্ছে যেন সদ্য ঘুম থেকে তুলে আনা হয়েছে।

বাবাকে দেখে দূর থেকে এগিয়ে এল অলোক। তার এখন আর বরের বেশ নেই। ধুতি-পাঞ্জাবী খুলে শার্ট প্যান্ট পরে ফেলেছে। একটু ম্লান হাসল। কপালের ঘাম মুছে বলল, বড্ড ধকল গেল বাবা। বিজয়কে কত খুঁজে খুঁজে তবে এনেছি। ভেবে দেখলুম ওই হচ্ছে কুন্তলার আইডিয়াল ম্যাচ। আচ্ছা বাবা দোষ কি শুধু এনাদের? তোমার খোঁজ করার কি একটু দায় ছিল না? আর একটু হলে তো আমাকে গাড্ডায় ফেলে দিচ্ছিলে? বাপ রে বাপ! বাবা বটে তুমি।

পুলিশ সাহেব এলেন। দেখলেন, হাসলেন। ডায়রির খাতা থেকে কেস নং ৪১৯ এর পাতাটা ছিঁড়ে ফেলে দিলেন। কৌতূহলী সকলের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্লের সঙ্গে বললেন, ওটা দু নম্বরি খাতা ছিল। জানি এমন হবে। কত হয়।

অরুণ চট্টোপাধ্যায়